কোদালা আজিজিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসাঃ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

শুরুতেই আমরা কোদালা মাদ্রাসা প্রতিষ্টালগ্নে কোদালার যে সকল ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত আলেমগন এবং স্থানীয় মুরুব্বীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আমরা উনাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি। আমরা পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি পটিয়া জমিরিয়া মাদ্রাসার প্রাক্তন মোহতমেম (মহা-পরিচালক) মরহুম জনাব মুফতি আজিজুল হক সাহেবকে। কোদালা মাদ্রাসা কোদালার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্টান। ইসলামী দীনি শিক্ষার আলো সবখানে ছড়িয়ে দেয়ার যে উদ্যোগ এই প্রতিষ্টানটি নিয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংশনীয়। এটি শুধুমাত্র কোদালা নয় রাঙ্গুনীয়ার একটি বড় ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্টান। এই প্রতিষ্টানটির প্রতিষ্টাতা মোহতামেম (মহা-পরিচালক) ছিলেন কোদলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট আলেম জনাব মৌলানা মেহেরুজ্জামান সাহেব। উনার প্রতি জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
১৯৩৩ সালে (১৩৫৩হিঃ) মৌঃ মেহেরুজ্জামান সাহেব হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে উনার ইসলামি শিক্ষা সম্পন্ন করে নিজ গ্রাম কোদালায় ফিরে আসেন। নিজ এলাকার লোক -জনকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতে লাগলেন। গ্রামে এসে উনি একটি ইসলামি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি জনাব নজু মিয়া তালুকদার (আব্দুল ওয়াহেদ তালুকদারের বাবা) উনাকে রাজানগর(নজু মিয়া তালুকদারের বাড়ীর কাছে একটি ছোট্ট পাড়ার নাম)এর একটি মক্তবের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করলেন। উনি তাতে রাজী হলেন এবং উক্ত মক্তব পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন। মক্তবটি ছিল আনুমানিক দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০ফিট এবং প্রস্থে ১৫ফিট আকারের একটি বেড়ার ঘর। পরবর্তীতে উনি মক্তবটিকে একটি ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় উন্নীত করেন। কৌমী মাদ্রাসার পাঠ্যসুচী অনুকরনে তিনি এখানে তৃতীয়/চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত চালু করলেন। আশপাশের কয়েকজন ছাত্র নিয়ে উনি ক্লাস শুরু করলেন। ধীরে ধীরে ছাত্রসংখ্যা বাড়তে লাগল। কোদালা কালাগাজি জামে মসজিদের তখনকার খতিব মৌঃ আমজাদ সাহেবকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এলাকার লোকজন অত্যন্ত সন্তুষ্ট এই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায়। বিশেষ করে মৌঃ আব্দুল হামিদ (হাফেজ হাসেম সাহেবের পিতা) এই প্রতিষ্টানের পিছনে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। সবাই চাঁদা সংগ্রহ করে ঘরটিকে আরও বড় করে তৈরী করলেন। এই ফোরকানিয়া মাদ্রাসাটি অনেকদিন যাবদ ছিল। ১৯৯১ সালে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মান্নান(আব্দুল ওয়াহেদ তালুকদারের ছোট ভাই) এই মাদ্রাসা ঘরটিকে একটি তিন তলা ভবন হিসাবে পুনঃনির্মান করেন। বর্তমানে মাদ্রাসা ভবনটি সুউচ্চগর্বে সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
১৯৩৯ সালের গোড়ার দিকে স্থানীয় কয়েকজন মুরুব্বী কোদালায় আরো বড় পরিসরে একটি কৌমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবলেন। বিশেষ করে হামজু মিয়া মুন্সি, নজু মিয়া তালুকদার, মুক্তোল হোসেন(মানিবর বাড়ী/হক সাহেবের বাড়ী), আলী আকবর মুন্সি, জেবদ আলী মুন্সি প্রমুখ। তাই উনারা মৌঃ মেহেরুজ্জামান সাহেব কে এর দায়িত্ব দিতে চাইলেন। সবাই আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন যে, পটিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্টাতা মহাপরিচালক হযরত মৌঃ শাহ সুফী আজিজুল হক (রঃ) সাহেবকে দাওয়াত করে একটি মিটিং-এর আয়োজন করা হউক। উনার উপস্থিতিতে উক্ত প্রতিষ্টানের ব্যপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। তাতে সবাই একমত হলেন।
হযরত মৌঃ শাহ সুফী আজিজুল হক (রঃ) সাহেবকে দাওয়াত করা হল এবং উনার উপস্থিতিতে মুক্তোল হোসেনের (মানী বর বাড়ী/হক সাহেবের বাড়ী) কাছারি ঘরে মৌঃ শাহ সুফী আজিজুল হক (রঃ) সাহেবের সভাপতিত্বে একটি মিটিং অনুষ্টিত হয়। মুলত এই মিটিংই কোদালা মাদ্রাসার প্রথম মিটিং। এই মিটিং এ মাদ্রসার নাম ঠিক করা হয় -”কোদালা আজিজিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসা”-এবং মৌঃ মেহেরুজ্জামান সাহেবকে সর্বসম্মতিক্রমে মোহতমেম নিযুক্ত করা হয়। মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম এবং পাঠ্যক্রম কওমী মাদ্রাসার গঠনতন্ত্র মোতাবেক হবে। এখান থেকেই কোদালা মাদ্রাসার আনুষ্টানিকভাবে পরিপূর্ণ রুপে দ্বীনি শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়।
উক্ত মিটিং-এ মাদ্রাসার জন্য জায়গার প্রসঙ্গ আসলে জনাব জেবদ আলী মুন্সি কাঠালতলী গোপাটের জোড় পুকুর পাড়ের মুন্সি পুকুরের উত্তর-পূর্ব কোণে উনার জায়গাটি মাদ্রাসার জন্য দান করার কথা বলেন। সবাই সেই জায়গাটি পছন্দ করলেন এবং মাদ্রাসা ঐ জায়গায় নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। জায়গার পরিমাণ ছিল প্রায় চার/পাঁচ গন্ডার মত। জায়গার পরিমাণ কম হলেও আপাতত পুকুরের ভিতর থেকে গাছের বা বাঁশের খুঁটি দিয়ে আরো কিছু জায়গা বাড়িয়ে নিয়ে মাদ্রাসা ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সবাই চাঁদা সংগ্রহ করে কিছুদিনের মধ্যেই অতি দ্রুত মাদ্রাসা ঘর নির্মাণ করে ফেলেন। পুরোদমে শুরু হয়ে গেল কোদালা আজিজিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার কার্যক্রম। শিক্ষকের মধ্যে মৌলানা শফি সাহেব(কোদালা বাড়ই্য়র বাড়ী) ছিলেন উল্ল্যেখযোগ্য ।
মৌলানা আব্দুল কুদ্দুস, মৌলানা আব্দুল মান্নান(মানিবরবাড়ী), মৌলানা আব্দুল হক সলিম, পূর্ব কোদালা নিবাসী মৌলানা আব্দুল কাদের ও মৌলানা সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ ছিলেন কোদালা আজিজিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার প্রথম ব্যাচের ছাত্র।
জোড় পুকুর পাড়ে ভালভাবেই মাদ্রাসার কার্যক্রম চলছিল। এলাকার লোকজন প্রচুর সহায়তা করছিল মাদ্রাসার সকল প্রকার উন্নয়ন কাজে। এরি মধ্যে আনুমানিক ১৯৪৬ সালে মে মাসের দিকে হঠাৎ একদিন দুপুর ১২টার দিকে মাদ্রাসায় আগুন লাগে এবং পুরু মাদ্রাসা ঘর আগুনে পুরে যায়। ধারনা করা হয় মাদ্রাসার রান্না ঘরের চুলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত। সেদিন আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল যে কাঠালতলী গোপাটের বেশীর ভাগ ঘর-বাড়ী আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুন বাতাশে কর্ণফুলী নদীর অপর পারে চন্দ্রঘোনায়ও ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানেও অনেক ঘর-বাড়ীতে আগুন লেগে যায়। প্রায় দু’ঘন্টার বেশী সময় লেগেছিল আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে।
মাদ্রাসা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সে সময় অস্থায়ীভাবে জনাব মুক্তোল হোসেনের (মানিবর বাড়ী/হক সাহেবের বাড়ী) কাছারী ঘরে মাদ্রাসার কার্যক্রম চালানো হয়।
এই ঘটনার খবর পেয়ে জিরি মাদ্রাসার প্রতিষ্টাতা পরিচালক হযরত মাওলানা শাহ আহমদ হাছান রহঃ, হযরত মুফতি আজিজুল হক রহঃ (পটিয়া জমিরিয়া মাদ্রসা) এবং হযরত মাওলানা ওবায়দুর রহমান সাহেব (নায়েবে মোহতামিম, পটিয়া জমিরিয়া মাদ্রাসা) অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কোদালা আজিজিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করতে আসেন।
সবাই এ ধরনের একটি ঘটনায় গভীর মর্মাহত হন। অতি দ্রুত মাদ্রাসা পুনঃনির্মান করার উদ্যোগ নেন। উনারা সবাই এলাকার বিশিষ্ট জনদের সাথে নিয়ে মাদ্রাসার জন্য একটি উপযুক্ত জায়গার সন্ধান করতে লাগলেন।
মাওলানা শাহ আহমদ হাছান রহঃ একটি জায়গা পছন্দ করেন। জায়গাটির মালিক ছিল হাজী আব্দুল গনি তালুকদার। কিন্তু জায়গাটি ছিল পাড়ার ভিতর। তাই হযরত মুফতি আজিজুল হক রহঃ সাহেব বলেন -’এ জায়গাটি বসত বাড়ীর জন্য উপযুক্ত, মাদ্রাসার জন্য নয়’। তাই তিনি উক্ত জায়গায় মাদ্রাসা স্থাপন করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। পরে উনারা সবাই মিলে জায়গার সন্ধানে আদ্দিন্যে পুকুরের (জোড় পুকুরের উত্তর পাশের পুকুর) উত্তর পাড় দিয়ে পশ্চিম দিকে যেতে থাকেন। যেতে যেতে উনারা ব্যুজ্যের বাড়ীর জামে মসজিদের উত্তর পাশে কর্নফুলী নদীর তীরে একটি খালি জায়গা দেখে ওখানে দাঁড়িয়ে যান। উনাদের মাদ্রাসার জন্য ঐ জায়গাটি উপযুক্ত বলে মনে হয়। সবার সম্মতিক্রমে উক্ত জায়গাটিতে মাদ্রাসা পুনঃপ্রতিষ্টা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। জায়গার মালিক ছিলেন মুন্সিবাড়ীর আব্দুল মুনাফের নানা আলী আকবর মুন্সি। উনি সবার অনুরোধে জায়গাটি মাদ্রাসার জন্য দান করে দেন। জায়গার পরিমান প্রায় ৭/৮ গন্ডার মত। আবারও এলাকার সবাই মিলে সহযোগিতা করে বিভিন্নভাবে চাঁদা সংগ্রহ করে উক্ত স্থানে মাদ্রসা পুনঃনির্মান করলেন। সেটি ছিল বেড়ার নির্মিত ইংরেজী এল আকৃতির ঘর। মূল মাদ্রাসা ঘরটি পূর্ব-পশ্চিম লম্বা দক্ষিণ মুখী এবং আর একটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বা পশ্চিম মুখী। মাঝখানে খোলা মাঠ। পুনরায় চালু হল মাদ্রসার কার্যক্রম।
প্রায় ১৬বছরের মত(১৯৪৬ইং-১৯৬৩ইং) ঐ জায়গায় মাদ্রাসার কার্যক্রম চালু ছিল। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল হযরত মওলানা ইসহাক সাহেব(উত্তর রাঙ্গুনীয়া, সায়খুল হাদীস জিরি মাদ্রাসা), মওলানা ইউছুপ সাহেব(হাজীপাড়া, চন্দ্রঘোনা), মওলানা ফজলুর রহমান(উত্তর রাঙ্গুনীয়া, ক্বারী হারুন সাহেবের পিতা), মওলানা শফি সাহেব, মওলানা জহির আহমদ প্রমুখ। কিছুদিন পর (আনুমানিক ১৯৫৭/৫৮ সালের দিকে) দীর্ঘ ১৭/১৮ বছর মোহতামেম পদে দায়িত্বে থাকার পর মৌঃ শাহ মেহেরুজ্জামান সাহেব মোহতামিম পদ থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নিলেন। মৌঃ শাহ মেহেরুজ্জামান সাহেব মোহতামিম পদ থেকে বিদায় নিলে মুফতি আজিজুল হক সাহেব মওলানা শফি সাহেব(কোদালা) কে কোদালা মাদ্রাসার মোহতামিম নিয়োগ করলেন। তিনি দীর্ঘ দিন মাদ্রাসাকে পরিচালনা করলেন।
কিছুদিন পর দেখা দিল নদী ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গনের ফলে মাদ্রাসা আবার স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। এই বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসার প্রতিটি বার্ষিক সভায় আলোচনা চলতে লাগল। একদিন কোন একটি বার্ষিক সভায় পটিয়ার মুফতি আজিজুল হক সাহেব উনার আলোচনার এক পর্যায়ে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে এক হিন্দু ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে পড়েন এবং বলেন,- ”হুজুর আমার নিকট একখন্ড জমি আছে আমি উক্ত জমি মাদ্রাসার জন্য দান করতে চাই যদি আপনি তা গ্রহন করেন”। জায়গাটি হল মাদ্রাসার গোপাট যেখানে দীর্ঘদিন যাবৎ কোদালা আজিজিয়া মাদ্রাসার কার্যক্রম চলেছিল। এখনও যেখানে পুরাতন কোদালা মাদ্রাসা হিসাবে মাদ্রাসার আংশিক কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। হুজুর মাদ্রাসার জন্য উনার জায়গাটি গ্রহন করেন এবং ঐ জায়গার আশেপাশে আরও অনেক হিন্দুদের জায়গা ছিল যা পরবর্তীতে সব কিনে নেয়া হয়। মুসলিমদের মধ্যেও এর আশেপাশে কেউ কেউ জায়গার মালিক ছিল। উনাদের মধ্যে মরহুম হেদায়ত আলী (মাদ্রাসার গোপাট, মৌঃ হাছনের দাদা) মাদ্রাসার জন্য উনার জায়গাটি দান করেন।
সে সময় মাদ্রাসা স্থানান্তরের জন্য যাঁরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হযরত মওলানা আহমদ ছাফা এবং চন্দ্রঘোনা হাজী পাড়ার মওলানা ইউছুফ সাহেব প্রমুখ। উনারা রাঙ্গুনীয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে মাদ্রাসা বুজ্যের বাড়ীর ঐ জায়গা থেকে স্থানান্তর করে পুনঃনির্মানের চেষ্টা করেন। ১৯৬৩ সালে মাদ্রাসা পুরোপুরী স্থানান্তরিত হল। প্রায় দেড় কানির মত জায়গা। নির্মিত হল বিভিন্ন ঘর। কোনটা মাটির তৈরী কোনটা বেড়ার টিন সেড আবার কোনটা সেমি পাকা। প্রায় ১৫০জন ধারন ক্ষমতা বিশিষ্ঠ একটি সেমি পাকা মসজিদ এবং এতদসংলগ্ন একটি ছোট পুকুর। মসজিদের সামনে একটি খোলা মাঠ। ভালভাবে চালু হল মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম।
প্রায় ৩৩(১৯৬৩ইং-১৯৯৫ইং) বছর যাবৎ মাদ্রাসা সেই জায়গাতেই ছিল। এখনও পুরাতন কোদালা মাদ্রাসা হিসাবে মাদ্রাসার আংশিক কর্মকান্ড সেখানে অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু পরবর্তীতে আবারও দেখা দিল নদী ভাঙ্গন সমস্যা। মাদ্রাসা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়তে লাগল। মাদ্রাসাকে রক্ষা করা প্রয়োজন হয়ে পড়ল। শুরু হল নানা চিন্তা ভাবনা। কোথায় মাদ্রাসাকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা যায়? ১৯৯০ইং সালের দিকে চলতে লাগল একটি ভাল উপযুক্ত জায়গার খোঁজ। বিশেষ দু’টি জায়গার কথা আলোচনা হতে লাগল। একটি কোদালা টুব্বইল যেখানে বর্তমান কোদালা মহিলা মাদ্রাসা রয়েছে তার কিছুটা উত্তর পূর্বে এবং অন্যটি বর্তমানে যেখানে কোদালা মাদ্রাসা রয়েছে। পরে কোদালা টুব্বইল-এর প্রস্তাবটা বাতিল হয়ে গেল।
কোদালা কাঠালতলী গোপাট থেকে প্রধান রা¯তাটি সৈয়দ আলী সড়কের সাথে যুক্ত হয়ে কোদালা ফকিরা মুরা হয়ে সোজা দক্ষিণে চা বাগানের দিকে গেছে এবং সৈয়দ আলী সড়ক সোজা পশ্চিম দিকে চলে গেছে। এই দুই রাস্তার সংযোগস্থলে সৈয়দ আলী সড়ককে উত্তর দিকে এবং কাঠালতলী গোপাট থেকে আসা রাস্তাটিকে পূর্ব দিকে রেখে কোদালা মাদ্রাসার জায়গাটি নির্ধারন করা হয়।
কিন্তু জায়গার মালিক ছিল অনেকেই, যাঁরা তাদের জায়গা ছাড়তে চাইলেন না। তখন প্রাক্তন চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব রহমালি সাহেব জায়গার মালিকদের কাছ থেকে জায়গা কিনে নেয়ার চেষ্টা করলেন। রহমালি সাহেব বলেন- ’হয় আমরা জায়গা কিনে নিব অথবা জায়গা বদলি করে নিব’। অর্থাৎ মালিকদেরকে অন্য জায়গা থেকে সমপরিমাণ জায়গা দিয়ে দেয়া হবে। এতে সকলে রাজী হলেন এবং আলহাজ্ব রহমালি সাহেব নিজ উদ্যোগে নিজ খরচে মাদ্রাসার জন্য জমি ক্রয় করে বা নিজের জায়গার সাথে বদলিয়ে নিয়ে প্রায় অধিকাংশ জায়গা সংগ্রহ করলেন। রহমালি সাহেবের এই অবদান কোদালা মাদ্রাসার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। রহমালি সাহেব মাদ্রাসার জন্য শুধুমাত্র জায়গা সংগ্রহ করেন নাই বরং মাদ্রাসার যখনই কোন আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে তখনই নিজে সিংহভাগ আর্থিক অনুদানের যোগান দিয়েছেন। পরবর্তীতে উনার সুযোগ্য ছেলেরাও মাদ্রাসার যে কোন কাজে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে উনার ছেলে মোঃ হারুন এবং মোঃ ইউছুপ প্রতিনিয়ত মাদ্রাসার উন্নয়নের ধারা সচল রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান।
জায়গা সংক্রান্ত সকল বিষয় চুড়ান্ত হওয়ার পর ১৯৯২ সালের শেষের দিকে উক্ত জায়গায় কোদালা মাদ্রাসার একটি ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হল। জনাব আলহাজ্ব বজল আহমদ সওঃ, আব্দুল গণি তালুকদার, মৌঃ আব্দুল কুদ্দুছ প্রমুখ গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ সেদিন উপস্থিত ছিলেন। ১৯৯৫ সালে কোদালা মাদ্রাসাকে সম্পূর্ণরুপে স্থানান্তর করে সরিয়ে আনা হল এবং নতুন জায়গায় পুরোদমে মাদ্রাসার কার্যক্রম চালু হল।
কোদালা মাদ্রাসায় বর্তমানে প্রায় তিন কানির মত জায়গা রয়েছে। ৫৬ফিট দৈর্ঘ ৮৫ফিট প্রস্থ(৪,৭৬০বর্গফিট বা সাড়ে পাঁচ গন্ডা)একটি মসজিদ রয়েছে। এখানে প্রায় ১৫০০ লোক একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির ফাউন্ডেশন চার তলা হলেও এটি বর্তমানে একতলা পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। ২২০ফিট দৈর্ঘ্য ১৭০ফিট প্রস্থ একটি বিশাল খোলা মাঠ রয়েছে। যার দৈর্ঘ্যে ১০০ফিট এবং প্রস্থে ৮৫ফিট নিয়ে একটি ঈদ গাঁ তৈরী করা হয়। রয়েছে দুইটি পুকুর। যার একটি দৈর্ঘ্যে ১৬২ফিট এবং প্রস্থে ১২৫ফিট এবং অন্যটি দৈর্ঘ্যে ১২৪ফিট এবং প্রস্থে ১১৯ফিট।
রয়েছে তিনটি বহুতল ভবন। ভবনগুলির প্রতিটি তলের মোট আয়তন প্রায় ৫৫ হাজার বর্গফিট। এখানে শিক্ষাবিষয়ক কার্যক্রম এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো হয়। কোদালা মাদ্রাসায় কৌমী মাদ্রাসার পাঠ্যসুচী অনুযায়ী ১ম শ্রেণী থেকে একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়া লেখা করা যায়। এখানে স্থানীয় ছাত্র ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার ছাত্ররা ভর্তি হয় এবং মাদ্রসার হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা চালিয়ে যান।
কোদালা মাদ্রাসার বর্তমান মোহতামেম মুফতি মৌলানা আব্দুল কাদের সাহেব। মাদ্রাসার শিক্ষাবিষয়ক কার্যক্রম বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত। যেমন হেফজ বিভাগ, নুরানী বিভাগ এবং কিতাব বিভাগ। প্রত্যেক বিভাগ এবং শিক্ষকের জন্য রয়েছে আলাদা কক্ষ। ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৫০০শত। শিক্ষক রয়েছেন ২৬ জন। শিক্ষকরা প্রত্যেকে নিজ নিজ বিষয়ে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। ছাত্রদের প্রায় সবাই মাদ্রাসা হোস্টেলে থাকে। প্রতি দিন ছাত্র শিক্ষকের জন্য দুবেলা খাবার মাদ্রসায় রান্না করা হয়। প্রতি দিন দ’ুবেলা প্রায় ২০০ জনের খাবার রান্না হয়।
বৎসরে একবার বার্ষিক সভার আয়োজন করা হয়। এতে খ্যাতনামা আলেমগণ এবং এশিয়ার বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদরা আমন্ত্রিত হন। উনারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী বক্তব্য রাখেন। রাঙ্গুনীয়া তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই সভায় প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে। এটি রাঙ্গুনীয়ার সবচেয়ে বড় কৌমী মাদ্রাসা।

আলহাজ্ব মওলানা মেহেরুজ্জামান সাহেবঃ সংক্ষিপ্ত জীবনী।

মৌলানা মেহেরুজ্জামান সাহেব এর জন্ম ১৯০১ সালে (১৩২১ হিজরি) পূর্ব কোদালার একটি মুসলিম পরিবারে। নিজ গ্রাম কোদালায় মক্তবের প্রাথমিক পড়ালেখা শেষ করে চন্দ্রঘোনা হাজী পাড়া মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণী(রাহে নাজাত) পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর পটিয়া থানার অন্তর্গত জিরি মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি অষ্টম শ্রেণী(জামাতে ছাহারুম) পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯২৪ সালে দাওরায়ে হাদিস কামেল পাস করেন। একজন ইসলামী আধ্যাত্মিক ব্যাক্তি এবং ধর্মীয় বক্তা হিসাবে খ্যাতিলাভ করেন। কোদলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট আলেম জনাব মৌলানা মেহেরুজ্জামান সাহেব ১৯৩৩ সালে (১৩৫৩হিঃ) হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে উনার ইসলামি শিক্ষা সম্পন্ন করে নিজ গ্রাম কোদালায় ফিরে আসেন। নিজ এলাকার লোক-জনকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতে লাগলেন। গ্রামে এসে উনি একটি ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি জনাব নজু মিয়া তালুকদার(আব্দুল ওয়াহেদ তালুকদারের বাবা) উনাকে রাজানগর(নজু মিয়া তালুকদারের বাড়ীর কাছে একটি ছোট্ট পাড়ার নাম)এর একটি মক্তবের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করলেন। উনি তাতে রাজী হলেন এবং উক্ত মক্তব পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন। পরবর্তীতে উনি মক্তবটিকে একটি ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় উন্নীত করেন। ১৯৯১ সালে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মান্নান(আব্দুল ওয়াহেদ তালুকদারের ছোট ভাই) এই মাদ্রাসা ঘরটিকে একটি তিন তলা ভবন হিসাবে পুনঃনির্মান করেন। বর্তমানে মাদ্রাসা ভবনটি সুউচ্চগর্বে সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে।কোদালা মাদ্রাসার প্রথম প্রতিষ্টাতা মোহতামেম ছিলেন জনাব মৌলানা শাহ মেহেরুজ্জামান সাহেব। আনুমানিক দীর্ঘ ১৭/১৮(১৯৩৯ থেকে ১৯৫৭/৫৮) বছর মোহতামেম পদে দায়িত্বে থাকার পর তিনি কোদালা আজিজিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম পদ থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নিলেন ১৯৫৭/৫৮ সালের দিকে। কোদালা মাদ্রাসার মোহতমেম পদ থেকে বিদায় নেয়ার পর সরফভাটা মোয়াবিনুল ইসলাম মাদ্রাসার মুহতামিম নিযুক্ত হন। সেখানে দীর্ঘ বিশ বছর মোহতামেম হিসাবে দায়িত্বে থাকার পর পদত্যাগ করেন এবং ইছাখালী মাদ্রাসায় মোহতামেম-এর দায়িত্ব নেন। দীর্ঘ নয়মাস রাঙ্গুনীয়া ইছাখালী মাদ্রাসায় মহাপরিচালক বা মোহতামেম-এর দায়িত্ব পালন করেন। পরে উনি আবার সরফভাটা মোয়ামিনুল মাদ্রাসায় ফিরে আসেন। সরফভাটা মোয়ামিনুল মাদ্রাসায় দ্বিতীয়বারের মত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন রত অবস্থায় ১৯৯৬ সালে উনি সরফভাটায় প্রতিষ্টা করেন মেহেরিয়া মাদ্রাসা।রাজনৈতিক মতাদর্শঃ ছাত্রজীবনে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঈসমাইল শহীদ রহঃ, সৈয়দ আহমদ বেরলভী রহঃ, সৈয়দ হোছাইন আহমদ মাদানী রহঃ, হাজী শরীয়ত উল্লাহ প্রমুখ মনিষীদের রাজনৈতিক মতাদর্শের আনুসারী ছিলেন। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর ঘনিষ্ট সহযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৪৭সালের অখন্ড ভারতের ধারনাকে উনি সঠিক মনে করতেন। দীর্ঘদিন তদকালীন পূর্ব পাকিস্থান নেজামে ইসলামের রাঙ্গুনীয়া থানা শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ সালে রাঙ্গুনীয়া থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। উনার প্রতীক ছিল কিতাব। তৎকালীন আওয়ামী প্রার্থী জনাব ডাঃ আবুল কাশেমের কাছে নির্বাচনে হেরে যান। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামের কওমী বিশ্ববিদ্যালয় বলে খ্যাত দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় শতবার্ষিকী সমাবর্তন অনুষ্টানে ২০০ জন কৃতি ছাত্রদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ট শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি কোদালা আজিজিয়া মাদ্রাসা এবং সরফভাটা মেহেরিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্টাতা।উনার লেখা বই:

১) আল্লাহর ভালবাসা কোন পথে?

২) রাসুলের ভালবাসা কোন পথে?

৩) ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজন কেন?

১৯৪২ সালের দিকে কোদালায় স্থাপিত বনবিভাগের অফিসের এক কর্মকর্তাকে কে বা কাহারা রাতের অন্ধকারে হত্যা করে পাহাড়ে গাছের সাথে পেরাক মেরে ঝুলিয়ে রাখে। বনবিভাগের অফিসটা ছিল পাহাড়ী এলাকায়। সেই ঘটনায় মৌলানা মেহেরুজ্জামান সাহেব সন্দেহের তালিকায় ছিলেন। কারন পড়ালেখা শেষ করে গ্রামে আসার পর উনি কিছুদিন কোদালায় কাঠ ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তেমন কিছু প্রমানিত হয় নি। বন বিভাগের অফিসটি পরে কোদালা থেকে চন্দ্রঘোনা লিছু বাগানের কাছে বারগুনিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু নাম টি এখনও কোদালা ফরেষ্ট্রি অফিস নামেই রয়েছে।

তিনি বিভিন্ন দ্বীনি প্রতিষ্টানের পৃষ্টপোষক, মজলিসে শুরার সভাপতি ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে পটিয়া মাদ্রাসার মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। আমৃত্যু সরফভাটা মেহেরিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক বা মোহতামেম-এর দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন সৌখীন মানুষ। তাঁর নিজের পোষ্য একটি ঘোড়া ছিল। সেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন।

জনাব মৌলানা শাহ মেহেরুজ্জামান সাহেব ১৯৯৭সালের ২২ ডিসেম্বর বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ গৃহে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। উনার মৃত্যুতে কোদালা তথা রাঙ্গুনীয়া, হাটহাজারী, পটিয়া এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজে এক গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। উনার নামাজে জানাজায় অসংখ্য লোকের সমাগম ঘটে। নামাজে জানাজা দুইবার অনুষ্টিত হয়। প্রথমবার অনুষ্টিত হয় কোদালায় দ্বিতীয় বার নামাজে জানাজা অনুষ্টিত হয় সরফভাটা মেহেরিয়া মাদ্রাসার মাঠে। সেখানে উনার নামাজে জানাজা পড়ান উনার বড় ছেলে কারী ওবায়দুল্লাহ। সরফভাটা মেহেরিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কবর স্থানে উনাকে দাফন করা হয়, সেখানে উনি চির শায়ীত আছেন। মৃত্যুকালে উনি ছয় ছেলে, দুই কন্যা সন্তান এবং অসংখ্য ভক্ত গুণগ্রাহী রেখে যান।

জনাব মৌলানা শাহ মেহেরুজ্জামান সাহেবের প্রথম স্ত্রীর এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করলে উনি দ্বিত্বীয় বিবাহ করেন। প্রথম স্ত্রী মরিয়ম খাতুন ছিল উনার নিজ গ্রামের মেয়ে এবং দ্বিত্বীয় স্ত্রী নুরুন্নাহার থাতুন ছিল চন্দ্রঘোনার মেয়ে।

ক্বারী ওবায়দুল্লাহ এবং ক্বারী ফয়জুল্লাহ উনার প্রথম স্ত্রীর সন্তান। ক্বারী ওবায়দুল্লাহ একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। আন্তর্জাতিক কেরাত প্রতিযোগিতায় বিশ্বের দ্বিত্বীয় কারী হিসেবে স্বীকৃতি পান। প্রেসিডেন্ট হুসেন মোহাম্মদ এরশাদ-এর সময় বঙ্গভবনে, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদে আধিবেসনের শুরুতে কোরান তেলোয়াত করতেন কারী ওবায়দুল্লাহ। বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম-এ আজান দিতেন তিনি। তাঁর কন্ঠে আজান রেডিও বাংলাদেশ ঢাকা থেকে প্রচার হত। এ ছাড়াও ক্বারী ওবাইদুল্লাহ রেডিও বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেরাত বিভাগের প্রধান হিসাবে বেশ কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করেন।

কোদালার এরকম একজন গুণী এবং খ্যাতনামা ব্যক্তি জনাব মৌলানা শাহ মেহেরুজ্জামান সাহেবের প্রতি জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুক এ প্রার্থনা করি।

জনাব আহমদর রহমান চৌধুরীঃ সংক্ষিপ্ত জীবনী।

জনাব আহমদর রহমান চৌঃ জীবনের বেশীরভাগ সময় ব্যয় করেন সমাজ সেবার কাজে। পারিবারিক ব্যবসার পাশাপাশি সামাজ সেবা মূলক কাজেও তিনি একজন সফল মানুষ ছিলেন। উনার সময়ে মানুষের কাছে উনার গ্রহনযোগ্যতা ছিল উল্ল্যেখ করার মত। তিনি ছিলেন সবার শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। ১৯৬৫সালে এলাকার গণ্যমান্য মুরুব্বীদের সাথে নিয়ে কোদালা জুনিয়র হাই স্কুল প্রতিষ্টা করেন। পরবর্তীতে যেটি পূর্ণাঙ্গ হাই স্কুলে রুপ নেয়। ১৯৬৮ সালে রাঙ্গুনীয়া কলেজ পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করে হেরে যান।

তিনি তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিমলীগের রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রানিত ছিলেন।

জনাব আহমদর রহমান চৌঃ জন্মগ্রহন করেন কোদালায় একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম চৌধুরী পরিবারে। উনার পরিবার কোদালা তথা রাঙ্গুনীয়ার একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভ্রান্ত পরিবার। দু’ ভাইয়ের মধ্যে উনি ছিলেন বড়। বেড়ে উঠেছেন আর্থিকভাবে স্বচ্চল একটি অভিজাত ঝাকজমকপূর্ণ এক কোলাহলময় পরিবেশে। ছোট ভাই জনাব মুজিবুর রহমান চৌঃ ছিলেন ভদ্র সুশিক্ষিত জন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বি এস সি পাশ করেন। অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্র ছিলেন। বীনা পারিশ্রমিকে কিছুদিন কোদালা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেন। পরবর্তীতে কর্নফুলী পেপার মিলে কর্মরত ছিলেন।

১৯৪৫ সালে ইউ পি মেম্বার পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করেন। জনাব আব্দুল ওয়াহেদ তাং, হামিদ শরীফ প্রমুখরা ছিলেন উনার প্রতিদ্ধন্ধি। নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ১৯৫০, ১৯৫৫, ১৯৬০ সালেও ইউ পি মেম্বার হিসাবে জয় লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ইউ পি নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করেছিলেন মেরঅ হাজী(শিলক), বদিউজ্জামান সিকদার(শিলক)। জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে জনাব আহমদর রহমান চৌঃ সবাইকে পরাজিত করে ৯নং শিলক ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আব্দুল ওয়াহেদ তাং। চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান দুজনই কোদালা থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আর কোন নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্ধিতা করেন নাই জনাব আহমদর রহমান চৌঃ। কিন্তু সকল সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে নানাভাবে নিয়োজিত রেখেছিলেন।

জনাব আহমদর রহমান চৌঃ ১৯৭৭ সালের ১০এপ্রিল উনার নিজ গৃহে নিজ পরিবারের তত্তাবধানে বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন।

উনার ধারাবাহিকতায় উনার ছেলে জনাব আবু মনসুর চৌঃ ১৯৮৩ সালে শিলক ইউনিয়নের জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে ইউ পি সদস্য নির্বাচিত হন এবং সাফল্যের সাথে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন। আবু মনসুর চৌঃ ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গুনীয়া থেকে মশাল প্রতীক নিয়ে জাসদ মনোনীত প্রার্থী হন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিযোগে ১৯৭১সালে পাকিস্থানী মিলিটারির হাতে গ্রেফতার হন। দীর্ঘদিন পর বন্দি অবস্থা থেকে ছাড়া পান।

জনাব আহমদর রহমান চৌধুরীর আরেক ছেলে জনাব আবু হায়দার চৌঃ ১৯৯২ সালে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে শিলক ইউনিয়নের ইউ পি সদস্য নির্বাচিত হন এবং সাফল্যের সাথে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন। জনাব আবুহায়দার চৌঃ ১৯৯২ সালে চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব রহম আলী সাহেব আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে না থাকায় স্বেচ্চায় পদত্যাগ করলে ৯নং শিলক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিছু সময়ের জন্য। উনি বর্তমানে উনার ব্যক্তিগত ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন রকম সমাজ সেবা মুলক কাজের সাথে জরিত রয়েছেন। তিনি রাঙ্গুনীয়া মানবাধিকার সংস্থা কর্তৃক শ্রেষ্ট মানবাধিকার কর্মীর পুরষ্কারে ভূষিত হন। আমরা জনাব আহমদর রহমান চৌঃ-র প্রতি গভীর শ্রদ্ধ নিবেদন করছি এবং উনার বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করছি।

নুরুল হক সাহেবঃ সংক্ষিপ্ত জীবনি।

জনাব নুরুল হক সাহেব ১৯৩৩ সালে কোদালার একটি কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে উনি সবার বড়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করেন কোদালায়। কোদালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে মাধ্যমিক পড়ালেখার জন্য পটিয়া রাহাত আলী হাই স্কুলে ৬ষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি হন। উনার মামা আব্দুল্লাহ কেটি পটিয়া আদালতে সরকারি চাকুরী করতনে। তাই আব্দুল্লাহ কেটির বাসায় থেকে উনি এবং উনার আরেক মামা আব্দূল মান্নান(ইঞ্জিনিয়ার সাহেব) রাহাত আলী স্কুলে পড়াশুনা করতেন। নুরুল হক সাহেব এবং আব্দুল মান্নান ছিলেন সমবয়সী। সেখানে এক বছর ৬ষ্ট শ্রেণীতে পড়ার পর জনাব আব্দুল্লাহ কেটি বদলি হয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসলে উনারাও শহরে চলে আসেন। চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুলে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। মুসলিম হাই স্কুলে মামা পড়াশুনা চালিয়ে গেলেও জনাব নুরুল হক সাহেব পরে শিলক হাই স্কুলে চলে আসেন। ভর্তি হন নবম শ্রেণীতে। শিলক হাই স্কুল থেকেই এস এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন। ১৯৫০সালে কৃতিত্বের সাথে এস এস সি পাশ করেন । সেই সময় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে গড়মিল নিয়ে স্কুল কমিটির সভাপতি হামিদ শরীফের (শিলক হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং শিলক ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান) সাথে উনার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। সেই সময়কার শিলক হাই স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক নিরঞ্জন বাবুর পছন্দের ছাত্র ছিলেন বলে জানা যায় জনাব নুরুল হক সাহেব।
১৯৫০ সালে এস এস সি পাস করার পর নুরুল হক সাহেব ডাক্তারী পড়ার লক্ষ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে উনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে (জেনারেল হসপিটাল, বর্তমান আন্দরকিল্লায় অবস্থিত) ভর্তি হন। উনার মামা আব্দুল মান্নান ঢাকা আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। মামা, উনার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ালেখা চালিয়ে যান এবং যথাসময়ে সম্পন্ন করেন। নুরুল হক সাহেব পরে উনার এই ডাক্তারী পড়াশুনা ভাল না লাগায় মেডিকেল পড়াশুনা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। ভর্তি হন কানুনগো পাড়া কলেজে উচ্চ্ মাধ্যমিক শ্রেণীতে। সেখানে ১ম বর্ষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর পর উনি পত্রিকার এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে চাকুরির আবেদন করেন। পরে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তির্ণ হলে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে উনি এবং উনার অপর দুই বন্ধুর চাকুরী হয়। উচ্চমাধ্যমিক পড়ালেখা শেষ না করেই উনি পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে চাকুরীতে যোগ দেন ১৯৫৩ সালে। চাকুরীতে যোগদানের পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজ^ যোগে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো হয়ে উনাদের নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর কোয়েটায়। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে উনি দীর্ঘ সাত বছর (১৯৫৩-১৯৬০) যাবৎ কর্মরত ছিলেন। কোয়েটায় যাওয়ার পর ঠান্ডা জনিত কারনে উনারা নানা রকম সমস্যার মুখোমুখী হন। চাকুরীর প্রায় তিন বছর পর উনি জন্ডিসে আক্রান্ত হলে উনাকে কোয়েটা সামরিক হাসপাতালে দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। কোয়েটা ছাড়াও পেশোয়ার, করাচী, রাওয়াল পিন্ডি এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে চাকুরীর কারনে অবস্থান করতে হয় উনাকে । সেই সুবাদে তিনি মাতৃ ভাষা বাংলা ছাড়াও ভারত বর্ষের কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠেন। যেমন হিন্দি, উর্দু, মারাটি, পস্তু। এছাড়াও তিনি ইংরেজী ভাষায় অনর্গল কথা বলতেন। পরে পূর্ব পাকিস্তান-পশ্চিম পাকিস্তান দ›েদ্ব বিমান বাহীনির এক মারাটি অফিসারের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে সেই অফিসারকে মেরে আহত করে উনি এবং উনার আরেক বন্ধু বিমান বাহিনী থেকে পালিয়ে যান। উনার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সামরিক আদালতে মামলা হয়। উনি ফেরারী হয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে আত্মগোপন করে পালিয়ে থাকেন। উনার নাম এন. হক পরিবর্তন করে হক এন. করা হয়। বাড়ীতে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। একমাত্র উনার মামা আব্দুল্লাহ কেটির সাথে তখন উনার যোগাযোগ ছিল বলে জানা যায়। সেই সময় উনি পাকিস্তান আজিজ কোম্পানীর মার্কেটিং এবং সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে গোপনে চাকুরী করেছিলেন কিছুদিন। দীর্ঘ সময় ধরে পাঞ্জাবের রাজধানী অম্রিতসরে অবস্থান করেন। পরে ১৯৬৫ সালে এপ্রিল মাসে ভারত হয়ে উনি নিজ দেশে(পূর্ব পাকিস্তান) গোপনে প্রবেশ করেন।
বিয়ে করেন ১৯৬৫ সালেই। বিয়ের পর চট্টগ্রাম শহরের মোগলটুলিতে বাসা নিয়ে থাকতেন। তৎকালনি পাকিস্তান সাধারন বীমা কোম্পানী ”ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী”-তে অফিসার হিসাবে চাকুরী করেন কিছুদিন। ১৯৬৬ সালের দিকে বাংলাদেশ আওয়ামিলীগএর রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম জেলার প্রয়াত আওয়ামিলীগ নেতা জনাব হান্নান সাহেব, জহুর আহমদ, আব্দুল মান্নান, আবদুল্লাহ আল হারুন প্রমূখ নেতাদের সাথে গড়ে উঠে উনার ঘনিষ্টতা। উনারা ছিলেন উনার পথপ্রদর্শক। উনাকে অত্যন্ত ¯েœহ করতেন উনারা। অতি সল্পসময়ে জাতীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেত সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজলুল হক মনি এবং জাতীয় চার নেতার সাথে উনার এক নিবীড় রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে বৃহত্তর চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগে নেতৃত্ব দেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্থানী মিলিটারী উনার বাড়ী ঘেরাও করে তল্লাশী করে। উনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও উনার ছোট ভাই নুরুল আজিম পাকিস্থানী মিলিটারীর কাছে ধরা পড়েন। দীর্ঘদিন আটকে রাখার পর পাকিস্তানী মিলিটারী উনার ছোট ভাইকে ছেড়ে দেন। দেশীয় রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় ১৯৭১ সালে জ্বালিয়ে দেয়া হয় উনার শ্বশুরের ঘর বাড়ী(শিলক)। জনাব নুরুল হক সাহেব মুক্তি যুদ্ধের প্রশিক্ষনের জন্য স্বদলবলে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ দূর্গম পাহাড়ী পথ পারি দিয়ে ভারত যান। উনি ছিলেন উনার বাহিনীর কমান্ডার। সে সময় তিনি ভারতের নাগাল্যান্ড-এ অবস্থান করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর উনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৭৩ সালে উনার চরম প্রতিদ্ধন্ধি জনাব জামাল কন্ট্রাকটরকে হারিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ রাঙ্গুনীয়া থানা শাখার সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ চট্টগ্রাম জেলার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৩ সালে ইউ পি নির্বাচনে ৯নং শিলক ইউ্নিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করেন। নির্বাচনে উনার প্রতিদ্ধন্ধি জনাব নজির আহমদ চৌঃ উনার নির্বাচনী কর্মী মোঃ ইসমাইল(শিলক) এর মাধ্যমে নুরুল হক সাহেবকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। নিজ বিচক্ষনতার কারনে হক সাহেব বেঁচে যান। সেই নির্বাচনে জনাব নজির আহমদ চৌঃ এর কাছে পরাজিত হন তিনি।
১৯৭৩ সালে কোদালা জুনিয়র হাই স্কুলের হাল ধরেন। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। স্কুলকে জুনিয়র হাই স্কুল থেকে পূর্ণাঙ্গ হাই স্কুলে উন্নীত করেন। কোদালা হাই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ ২৪বছর(১৯৭৩-১৯৯৬) সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৬ সালে শিলক তথা দক্ষিণ র্ঙ্গাুনীয়ার দূর্ধর্ষ ডাকাত বলে খ্যাত এরশাদ্যে এবং শাহাইয়্যে কে এক নাটকীয় অপারেশনে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা ছিল জনাব নুরুল হক সাহেবের এক অসাধারন কৃতিত্ব। যার ফলে দক্ষিণ রাঙ্গুনীয়ার মানুষ স্বস্থির নিঃস্বাস ফেলে এবং নির্ভয়ে রাত কাটাতে পারে। মানুষের কাছে জনাব নুরুল হক সাহেব প্রসংশিত হন।
১৯৭৭ সালে ইউ পি নির্বাচনে ৯নং শিলক ইউ্নিয়ন থেকে পুনরায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করেন। সকল প্রতিদ্ধন্ধিকে হারিয়ে উনি প্রথমবারের মত ৯নং শিলক ইউ্নিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রায় চার বছর চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বে থাকার পর পরিষদের ৯জন সদস্যের ৮জন উনার প্রতি অনাস্থা প্রস্থাব আনেন। পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে একমাত্র জনাব বজল মেম্বার(শিলক) ছিল উনার পক্ষে। এসময় জনাব নুরুল হক সাহেবের বিরুদ্ধে প্রায় ৭৩টি রাজনৈতিক মামলা হয়। একদিকে পরিষদের মেম্বাররা অন্যদিকে ১৯৭৫পরবর্তী সময় রাজনৈতিক হয়রানির স্বীকার। এলাকার সকল নামী দামী প্রতিষ্টিত সওদাগর এবং গন্য মান্য ব্যাক্তিবর্গ উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সব মিলিয়ে সে সময়টা ছিল উনার খুব খারাপ সময়। যার কারনে উনাকে কিছু কৌশল অবলম্ভন করতে হয়েছিল। ১৯৮০ সালের মার্চ মাসের দিকে শিলক হাই স্কুলের মাঠে হেলিকপ্টার যোগে তৎকালিন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আসেন। সেই জনসভায় জিয়াউর রহমানের সাথে একান্ত আলাপ করার সুযোগ হলে জনাব নুরুল হক সাহেব শর্ত সাপেক্ষে বিএনপি তে যোগ দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে উনার প্রতিটি মামলার একটি সন্তোষজনক সমাধান করে নেন। পরে জিয়াউর রহমান সেনা অভ্যুত্থ্যানে নিহত হন।
১৯৮৩ সালে ইউ পি নির্বাচনে ৯নং শিলক ইউনিয়ন থেকে পুনরায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করেন এবং জনাব রহমালীর কাছে পরাজিত হন। এই নির্বাচনে রহমালী মিথ্যা আভিযোগে সেনাবাহিনী কর্তৃক উনার ছোট ভাই নুরুল আজিমকে নির্বাচনের প্রায় ১০/১৫দিন আগে গ্রেফতার করান। ৫ জানুয়ারীর’১৯৮৪ ছিল শিলক হাইস্কুলের মাঠে হক সাহেবের শেষ এবং বৃহত্তর নির্বাচনী জনসভা। নির্বাচনের তারিখ ছিল ১০জানুয়ারী। সেই জনসভায় বক্তৃতা রাখতে গিয়ে সে দিন বিশাল জনসম্মুখে নিজের ভাইয়ের গ্রেপ্তার হওয়ার কথা বলতে গিয়ে উনি কেঁদে ফেলেন। সেদিন প্রথম হক সাহেবকে কাঁদতে দেখা গেল প্রকাশ্যে জন সম্মুখে।
১৯৮২ সালের নভেম্বরের ২৩ তারিখ এক অজ্ঞাত কারনে চট্টগ্রামের কে সি দে রোডের হোটেল হ্যাপিলজের রুম খেকে গ্রেফতার হন। তিন চার ঘন্টা চট্টগ্রামের কতোয়ালী থানায় আটক থাকার পর ছাড়া পান।
১৮ আগস্ট ১৯৮৪ সালে শনিবার সন্ধ্যে আনুমানিক ছয়টার সময় কোদালা বালুর মাঠে এক বিতর্কিত লিপলেটকে কেন্দ্র করে হকসাহেব এবং মাইজ্যেমিয়া বাড়ীর উভয় পক্ষের সাথে এক বিরাট সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় হক সাহেব মারাত্মকভাবে মাথার পিছনে এবং কপালে আঘাত প্রাপ্ত হন। হক সাহেবকে ১নং আসামী করে রাঙ্গুনীয়া থানায় মামলা করা হয়। পরবর্তীতে গ্রাম্য সালীসের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হয়।
১৯৮৬সালে ৭ই মে সংসদ নির্বাচনের দিন কোদালা হাইস্কুলে (নির্বাচন কেন্দ্র) কবির আহমদ সেয়ান মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এটেম টু মার্ডার মামলা হয়। জনাব নুরুল হক সাহেবকে ১নং আসামী করে মোট ২৭জনকে মামলায় জড়ানো হয়। পরে ঘটনা প্রমাণিত না হওয়ায় কোর্ট সবাইকে বেখসুর খালাস দেন।
১৯৮৭ সালে রাঙ্গুনীয়া উপজেলা সমবায় সমিতির সভাপতি পদের নির্বাচনী লড়াইয়ে হেরে যান।
১৯৮৭ সালে উনার বড় ছেলে আক্কাছ রমজানে কাঠালতলী গোপাটের সেয়ানবাড়ী মসজিদ থেকে তারাবী নামাজ পড়ে ঘরে ফেরার পথে এক অতর্কিত হামলার স্বীকার হন।
৮নভেম্বর ’১৯৮৭ সাল রাত প্রায় একটার দিকে জাতীয় পার্টির আওয়ামী নেতাদের নির্যাতনের অংশ স্বরুপ নিজ গৃহ থেকে গ্রেফতার হন। সাথে উনার ছোট ভাই নুরুল আজিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় ১৫দিনের মত কারাবাসের পর দু’জন মুক্ত হন।
১৯৮৮ সালে ইউ পি নির্বাচনে ৯নং শিলক ইউ্নিয়ন থেকে আবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করেন। দ্বিতীয়বারের মত ৯নং শিলক ইউ্নিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯৯০ সালের ডিসেম্ভর মাসে উনার বড় ছেলে আক্কাছ নাছির উদ্দীন টুন্টুর ছুরিকাঘাতে আহত হয়।
১৯৯০সালের ১৩ই অক্টোবর শিলকের একটি ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন। বিকাল ৪টার সময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একদল সেনাবাহিনীর সদস্যরা উনাকে চন্দ্রঘোনা থানায় নিয়ে যায়। কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পরের দিন সকালে রাঙ্গুনীয়া থানায় হস্তান্তর করলে থানা থেকে সন্ধ্যে ৭টার দিকে ছাড়া পান।
১৯৯১এর ঘূর্ণীঝড় পরবর্তী সময়ে সরকারী ত্রাণ বিতরনে অনিয়মের মিথ্যা অভিযোগে ২১শে ডিসেম্ভর সন্ধ্যে ৭টার সময় সেনা বাহিনীর সদস্যরা উনার বাড়ী ঘেরাও করে। উনি বাড়ীতে না থাকায় গ্রেফতার এরাতে সক্ষম হন।
দীর্ঘ পাঁচ বছর সফলতার সাথে দায়িত্বপালন করার পর ১৯৯২ সালে উনি আবার ইউ পি নির্বাচনে ৯নং শিলক ইউ্নিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। তবে পরবর্তীতে উনি উনার প্রার্থীতা পদ প্রত্যাহার করেন এবং জনাব রহমালীর সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারনা কাজে অংশ নেন। রহমালী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রায় দু’বছর পর রহমালী পদত্যাগ করলে ১৯৯৪ সালে উপনির্বাচন হয়। জনাব নুরুল হক সাহেব আবার সেই উপনির্বাচনে অংশ নেন এবং জনাব নোয়াব মিয়ার কাছে পরাজিত হন।
১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে উনার বড় ছেলে আক্কাছের উপর আবারও আক্রমন হয়। একদল চন্দ্রঘোনার যুবক কোদালার কিছু উসৃংখল তরুণ সন্ত্রাসীর সহায়তায় আক্কাছ উন নুর লাঞ্চিত হন এবং মারাত্মকভাবে আহত হন।
জনাব নুরুল হক সাহেব ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত রাঙ্গুনীয়া কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৮৭ সালে রাঙ্গুনীয়া কলেজ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে জহির-নুরুল হক পরিষদ বিপুল ভোটে জয়ী হয়। আমরন বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ রাঙ্গুনীয়া থানা শাখার ছিনিয়র সহসভাপতি এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
২০০০ সালে জুন মাসে কোদালা বাজার থেকে নিজ বাড়ীর অভিমুখে আসার পথে উনার মেজ ছেলে সরফরাজ কিছু দূষ্কৃতকারীর হাতে লাঞ্চিত হয়।
২০১১ সালের ১৭ই জানুয়ারী রাত ৮টায় বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উনার নামাজে যানাজা অনুষ্টিত হয়। কোদালা, শিলক ছাড়াৃও রাঙ্গুনীয়া তথা চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ-মহানগর আওয়ামিলীগের অসংখ্য নেতা কর্মী এবং সর্বস্থরের আপামর জনসাধারন উনার নামাজে যানাজায় অংশ নেন। উনার মৃত্যুতে কোদালা, শিলক ছাড়াৃও রাঙ্গুনীয়া তথা চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ-মহানগর আওয়ামি পরিবার এবং সর্বসাধারনের মাঝে এক গভীর শোকের ছায়া নেমে আাসে। মৃত্যুকালে উনি উনার স্ত্রী, তিন ছেলে, পাঁচ মেয়ে এবং অসংখ্য ভক্ত শুভাকাঙ্কী রেখে যান।
জনাব নুরুল হক সাহেব প্রচুর চা পান করতেন এবং একজন চেইন স্মোকার ছিলেন। প্রচুর ধুমপান করতেন। কিন্তু শারিরীকভাবে সুস্থ ছিলেন। খেলাধুলায় অংশ নিতেন। ক্রাম, দাবা, ¯œুকার, বিলিয়াড, তাস এসব খেলা খেলতেন। তরুণ বয়সে ফুটবলও খেলতেন। কখনও কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত হননি। পোষাক-আষাকে ছিল পরিপাটি, অত্যন্ত গোছালো, ছিল আভিজাত্যের ছোঁয়া। একান্ত নিজের জগত বলে কিছু ছিল না উনার। জনতার জগতই উনার জগত ছিল। জনসমাগমের মাঝেই নিজের জগত তৈরী করে নিতেন।। জনসমাগমে নিজেকে সমুজ্জল করে তুলে ধরতেন। সাহসিকতার পরিচয় দিতেন সকল কর্মকান্ডে। ৭০এর দশকের দিকে আত্মরক্ষার জন্য রিভলবার বহন করতেন। পরে অবশ্য সেটি থানায় জমা দেন। জনহিতকর কাজে সর্বদা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে সামনে এগিয়ে যাওয়া ছিল তাঁর স্বভাব। সর্বদা জন-মুখরিত সতস্ফুর্ত থাকতেন। মানুষকে সাথে নিয়েই থাকতেন। মানুষকে ভালবাসতেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ছিলেন গণমানুষের সাথে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কোন রকম শ্রেণী বৈষম্য বা ভেদাভেদ ছাড়াই মানুষের সাথে মেলা মেশার এক অসাধারন বৈশিষ্ট ছিল তাঁর। ছিল যে কোন মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা। কখনও একান্ত আপন জনও উনার শত্রæ হয়ে উঠেছিল আবার চরম শত্রæ হয়ে উঠেছিল খুব ভাল বন্ধু, আপন জন। সর্বদা জনসেবাই ছিল তাঁর আকাঙ্কা তাঁর বিলাসিতা তাঁর শক্তি সম্পদ। জীবনে ব্যর্থতা সফলতা দু’ই ছিল উনার। কখনও কারও উপকার করতে গিয়ে অন্যের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। কাউকে খুশী করতে গিয়ে কাউকে দুঃখ দিয়েছেন। বন্ধু যেমন রয়েছে শত্রæও রয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছেন। তবে নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকার এক দৃঢ়তা উনার মধ্যে ছিল। অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে উনার প্রতিবাদী কন্ঠ সর্বদা সোচ্চার ছিল। জীবনে সবচেয়ে বেশী মোকাবেলা করেছেন আর্থিক অসঙ্গতিকে। তবুও সামলিয়ে নিয়েছেন সবকিছু। সামনে এগিয়ে গিয়েছেন। এতটুকু পিছ পা হননি। নিজেকে ঠিকিয়ে রাখতে কখনও কখনও কিছু অনিয়মের আশ্রয় নিতে হয়েছিল। সব মিলিয়ে এ জীবন ছিল বহু ঘটনা আর বৈচিত্রে ভরপুর। ঘাত-প্রতিঘাত, ক্ষমা-প্রতিশোধ, উত্থ্যান-পতন, আনন্দ-বেদনা, শত্রæ-মিত্র, আপন-পর, হার-জিত, পাপ-পুণ্য, সবই মিলানো মিশানো। অর্জনের পাশাপাশি অনেক মূল্যও দিতে হয়েছে। হারাতে হয়েছে অনেক কিছু। তবুও এরকম একটা জীবন কোদালায় হয়ত আর সহশ্র শতাব্দীতেও আসবে না। আমরা উনার আত্মার চির শান্তি কামনা করছি। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি উনি যেন জান্নাতবাসি হউন।

The Conveyor

মনের মত গতিশীল

Hars News

Mission- Health, Education & Society Development

আমার শহর শিলিগুড়ি

আমার শহর শিলিগুড়ি

KHABAR AROHAN

THE EXACT ADDRESS OF THE TRUE NEWS

Bangladesh News Network

News Worth Knowing

মুজিববাদ

অমর হোক

Mohammad Jewel Rana

m.facebook.com/im.the.jewel

apnaurdu

Just another WordPress.com site

Nurul Imran

flirting with life

The Male Factor (TMF)

Serving MANkind

Ktech

Let's build tomorrow

Leespedia

Feel the life

SolaimanGraphy

Blogging, Photography, Travel Story - ব্লগিং, ফটোগ্রাফি, ভ্র্রমন কাহিনী

Quak Quaks of the Ugly Duckling

How i learned to stop worrying and love the blog

AGAMI KALARAB আগামী কলরব

Voice from the heart, news beyond boundaries

বঙ্গদর্পণ

বাংলা ও বাঙালির ডিজিটাল ম্যাগাজিন

Pradip Kumar Ray

Motivation , Inspiration , Banking Technology , Tour and Travel